10%
ছাড়
বিস্তারিত
৬০৮০ সাল। টেলিপ্যাথিকে বিজ্ঞানে রূপ দিয়ে মানুষ তৈরি করেছে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী মানবিক কম্পিউটার, যে মানুষের মস্তিষ্কে ঢুকে তার চিন্তাকে পড়তে পারে। এখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তখনকার বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপায়ে ইভুলেশন ঘটিয়ে সাধারণ হিউম্যান থেকে এপসিলন হিউম্যান তৈরি করার কাজে হাত দেয়, এই এপসিলন হিউম্যান একই সাথে একাধিক স্বতন্ত্র সত্তা ধারণ করবে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি ইভুলেশন কি প্রকৃতি মেনে নিবে? যদি মেনে না নেয় তাহলে প্রকৃতির ভূমিকা কী হবে? সমাজের এই বিরূপ প্রভাব পড়ে, যার ফলে এর কারণ উদ্ধারে নামে একদল সাহসী মানুষ। তাদের সাথে যোগ দেয় বিশেষ এক মানুষ, প্রচলিত মানুষের সংজ্ঞায় সে ঠিক মানুষ নয়! এরকম একজন মানুষ হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হলো? এর সাথে কি প্রকৃতির কোন যোগসূত্র আছে? এরকম একটি শ্বাসরুদ্ধ কাহিনীকে কেন্দ্র করে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নিউক।
একটুখানি পড়ুন
প্রথম অধ্যায়
সূর্যের তেজ কিছুটা কমে এসেছে তখন। আকাশে লাল আভা ছড়িয়ে আছে। অতিকার স্কাইজায়ানগুলো হলুদ আলো বিচ্ছুরিত করতে—করতে অবিরাম ছুটে চলছে আকাশের বুকে। রাস্তার দুধারে সারি—সারি দানবাকৃতি দু—তিন হাজার তলা বিশিষ্ট কংক্রিটের বিল্ডিং। রাস্তার মাঝখানে বিভিন্ন আকৃতির গ্রাউন্ডফ্লায়ারগুলো ভূমি থেকে সামান্য উঁচুতে ভেসে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে চলছে যে যার মতো।
গত চার হাজার বছরে পৃথিবীর কতটা পরিবর্তন হলো, সেটা বুঝার চেষ্টা করছে নিউক। বাতাস সামান্য ভারী, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, অভিকর্ষ বলের তারতম্যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হলো নিউককে। আর কী—কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, সেটা এই মুহূর্তে ধরতে পারছে না সে। তবে কেমন যেন একটি দম বন্ধ করা অস্বস্তি পেটের ভেতর টের পায় নিউক। অনেকক্ষণ ধরেই তার মনে হচ্ছে কী যেন নেই এই জগতে! ব্যাপারটি কী, সে ধরতে পারছে না। মনের ভিতর অজানা খচখচানি কাজ করছে অবিরাম।
সে নিজেকে সামলে সামনের দিকে পা বাড়ায়। মানব সভ্যতা আজ এতটা এগিয়ে যাবে, ভাবতে পারেনি নিউক। রাস্তায় কর্মব্যস্ত মানুষ এবং রোবটগুলো হেঁটে চলছে যে যার মতো। সবার শরীরেই বিচিত্র ধরনের পোশাক। রোবটগুলো বিভিন্ন আকৃতিরÑকারো মানুষের মতো দুটি করে হাত—পা, কারোবা আট দশটি। দেখতে অনেকটা অক্টোপাসের মতো। মাথার নিচের অংশটুকু মানুষের মতো কৃত্রিম সিনথেটিকের চামড়া লাগানো। তবে মস্তিষ্কগুলো সবারই চকচকে ধাতব দিয়ে তৈরি, সেখানে কোনো কৃত্রিম চামড়ার প্রলেপ দেয়া হয়নি।
নিউক ছোট—ছোট পায়ে সামনে এগিয়ে চলে। সামনে সে একটি জটলা দেখতে পায়। ভিড়ের মধ্যে দেখে একটি তরুণীকে কেন্দ্র করে কয়েকজন রোবট দাঁড়িয়ে আছে। সবার হাতে ভয়ানক অস্ত্র। রোবটগুলো সম্ভবত আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। সবার শরীরেই একই রকমের বিচিত্র পোশাক। তরুণীটি দেখতে ছিমছাম গড়নের। চুলগুলো খাটো করে ছাঁটা। বাজপাখির ঠেঁাটের মতো লম্বা নাক। চোখে—মুখে দারুণ ক্ষিপ্ততা। শিকারি পাখির মতো চারদিকে তাকিয়ে যেন পরখ করে নিচ্ছে অস্ত্রধারী রোবটগুলোকে।
একটি রোবট সাবধানে সামনে এগিয়ে তরুণীকে ধরতে গেলে তরুণী কুংফু মেরে ফেলে দেয় রোবটটিকেÑকোক করে শব্দ হয়। তারপর তড়িঘড়ি করে একটি খাম্বার পিছনে আশ্রয় নেয় সে। রোবটগুলো এবার ভয়ানক অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি রশ্মি নিক্ষেপ করতে থাকে। রশ্মির ফলার আঘাতে তরুণীর পিছনের দেয়াল ধসে পড়ে! ভয়ানক রশ্মির নীল আলোতে চারদিক ছেয়ে যায়। তরুণীও তখন কোমর থেকে ছোট অস্ত্র বের করে রশ্মি ছুঁড়তে থাকে। একটি রোবট রশ্মির আঘাতে ছিঁটকে পড়ে। আরেকটি রোবটের চকচকে ধাতব মাথা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। শরীরের সিনথেটিকের চামড়া গলে পোড়া রাবারের উৎকট গন্ধ বের হয়। শরীরের ভিতর থেকে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ বের হয়ে আসে। শট—সার্কিটের চড়চড় শব্দ হয়। অন্যান্য মানুষ এবং রোবটÑযারা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে—দাঁড়িয়ে তামাসা দেখছিল, তারা সবাই নিজেদের সামলে নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়।
এবার বাকি রোবটগুলো সামনের দিকে অস্ত্র বাগিয়ে কঁুজো হয়ে রশ্মি ছুঁড়তে—ছুঁড়তে এগিয়ে যায়। তরুণীটি এবার অনেকটাই কোণঠাঁসা হয়ে পড়ে। তরুণীটি একেবেঁকে রশ্মি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে কৌশলে পালাতে চায়, আর তখনই পিছন থেকে আরেকটি রোবট লাথি মেরে ফেলে দেয় তাকে। তরুণীটিকে কয়েকজন রোবট ধরে শক্ত করে বেঁধে ফেলে।
রাস্তায় ডানে তখন একটি অতিকায় স্কাইজায়ান এসে নামে। স্কাইজায়ানের পাখার দমকা বাতাস এসে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক জনতার শরীরে আছড়ে পড়ে। স্কাইজায়ান থেকে বের হয়ে আসে একজন উঁচু লম্বা নারী। তার চুলগুলো জট বেঁধে নাভির কাছে এসে ঠেকেছে। চেহারা দেখতে কুৎসিত। চেহারায় অসংখ্য দাগ। চোখে চশমার মতো কিছু একটা পরে আছে। চশমার কাঁচের আড়ালে ধূর্তের মতো চোখ তার। দেখলে মনে হয়, এইমাত্র নরক থেকে উঠে এসেছে কোনো পিশাচিনী। প্রাচীন পৃথিবীতে সম্রাটদের যেমন করে মানুষ মাথা নুইয়ে কুর্নিশ করত, ঠিক তেমনি অস্ত্রধারী রোবটগুলোও পিশাচিনীকে কুর্নিশ করল।
ভয়ানক মহিলাটি সামনে এগিয়ে গিয়ে সজোরে তরুণীটির গলা ধরে শূন্যে উঠিয়ে ফেলল। তরুণীটিকে দু’হাত দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার বৃথা চেষ্টা করছে। কিছু একটা জিজ্ঞেস করছে তরুণীকে। তরুণীটি নিজের মুখ শক্ত করে থুথু ছিঁটিয়ে দেয় ভয়ানক মহিলাটির মুখে। ক্ষেপে যায় মহিলাটি। তরুণীটিকে পুতুলের মতো আছড়ে মারে রাস্তায়। তরুণীটি ভূমিতে আছড়ে পড়ে সামান্য শূন্য ভেসে ছিঁটকে পরে কিছুটা দূরে। মহিলাটি চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করে পুনরায় স্কাইজায়ানে গিয়ে ওঠে। আইন—শৃঙ্খলা রোবট বাহিনী তরুণীকে টেনে তুলে দূত মহিলাটিকে অনুসরণ করে স্কাইজায়ানে উঠে পড়ে। ইঞ্জিনের গমগম গর্জন করে স্কাইজায়ানটি উড়ে চলে যায়।
এতক্ষণ যারা তামাসা দেখছিল, সবাই যে যার মতো চলে যেতে থাকে। ‘এরা কারা? ওই পিশাচ মহিলাটি কে, যে তরুণীটিকে ধরে নিয়ে গেল?’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক রোবটকে জিজ্ঞেস করে নিউক।
রোবটটি নিজের চকচকে ধাতব মাথাটি ঘুড়িয়ে তাকায় নিউকের দিকে। নিউকের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পরখ করে নেয়। প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে, ‘তুমি কে?’
‘প্রশ্ন দিয়ে কখনও প্রশ্নের উওর হয় না!’ বেশ বিরক্ত হয়ে বলে নিউক।
‘তুমি সত্যিই জানো না ইনি কে?’ রোবট ধাতব মুখে এক ধরনের আশ্চর্যের ভাব ফুটিয়ে তুলে বলে।
একটু থেমে আবার বলে, তোমার মাথাটা দেখতে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বড়, কিন্তু বড় মাথা হলে কী হবে, মগজে বুদ্ধিশুদ্ধি নেই মনে হচ্ছে! দিন—দুনিয়ার কোনো খবর তুমি রাখো না!’
বড় মাথা বলাতে নিউকের আত্মসম্মানে বাঁধে। নিউক বয়সে তরুণ। বয়স সাতাশ হবে। শক্তপোক্ত চেহারা। লম্বায় মাঝারি সাইজের। মুখমণ্ডল দেখতে লম্বাটে, চোখের রঙ ধূসর বর্ণের। এই বয়সের তরুণদের কটু কথা বদ হজম হয়, নিউকেরও তাই হলো। তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল। চোয়াল জোড়াও শক্ত হয়ে এলো।
‘আমাকে বড় মাথা বলার আগে নিজের দিকে তাকা ব্যাটা আট পা—ওয়ালা অক্টোপাস কোথাকার! মনে হয় তোর পাছায় লাথি মেরে ফেলে দেই!’ বিড়বিড় করে বলে নিউক।
রোবটের ভিতরের কম্পিউটার নিউকের কথা প্রসেস করতে সময় নেয় বেশ, অনেক কথাই বুঝতে পারে না। তবে এটুকু বুঝতে পারল যে নিউক বেশ রাগান্বিত তার উপর। তার ভিতরের কম্পিউটার এইমাত্র বলল, ‘চেহারায় দুখি একটা ভাব ফুটিয়ে তুলতে। রোবটটি রেডিয়ামের চোখের ঔজ্বল্য কিছুটা কমিয়ে আনল, চেহারায় মাত্রারিক্ত আবেগ ফুটিয়ে বলল, ‘আহা রাগ করছ কেন? শোনো একজন স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন ১০৫০ কিউবিক সেন্টিমিটার, কিন্তু তোমার মস্তিষ্কের আয়তন প্রায় ১২০০ কিউবিক সেন্টিমিটার। তাই তোমাকে বড় মাথা বলেছি, তুমি যদি কিছু মনে কর আমি দুঃখিত।’
এবার নিউকের রাগ কিছুটা প্রশমিত হলো।
আবার বলল রোবটটি, ‘তুমি এখনও রেগে আছ দেখছি। তোমার প্রশ্নের উওর দেইÑযেই অস্ত্রধারী রোবট দল দেখলে, এরা এই গ্রহের আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে আছে। আর যে স্কাইজায়ান থেকে বের হলেন তিনি জেনারেল গ্রাটিয়া। আমাদের গ্রহের মহান শাসক মহামান্য উথার। তিনিই বিগত ত্রিশ বছর ধরে শক্ত হাতে এই গ্রহ পরিচালনা করছেন। তিনিই জেনারেল গ্রাটিয়াকে বিজ্ঞান পরিষদের প্রধান করেছেন। তাই মহান শাসক মহামান্য উথারের পরই এই গ্রহের সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছেন জেনারেল গ্রাটিয়া।’
‘ইনি বিজ্ঞান পরিষদের প্রধান কী করে হন? একজন জেনারেলকে বিজ্ঞান পরিষদের প্রধান করল কেন?’
রোবটটি নিউকের কাছে ঝুঁকে এসে তথ্য সরবরাহ করার ভঙ্গিতে নিচু গলায় বলল, ‘বিজ্ঞান পরিষদ এই গ্রহের নীতিনির্ধারণ করে থাকে। বিজ্ঞান পরিষদের উপর পুরোপুরি কতৃর্ত্ব স্থাপনের জন্য তিনি তার কাছের লোক জেনারেল গ্রাটিয়াকে বিজ্ঞান পরিষদের প্রধান করেছেন। তাছাড়া আমাদের এই গ্রহে বিদ্রোহীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাই উনাকে বিজ্ঞান পরিষদেরও দায়িত্ব দিয়া হয়েছে সব কিছু নিয়ন্ত্রণের জন্য। যেই তরুণীটিকে ধরে নিয়ে গেল, সে একজন বিদ্রোহী ছিল।’
নিউক বেশ চমকে বলল, ‘বিদ্রোহী! এরা কারা, তাদের উদ্দেশ্যই বা কী?’
‘আহা আস্তে কথা বলো! দেয়ালেরও কান আছে! এই বিদ্রোহীরাই আমাদের গ্রহের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। খবরদার এগুলো নিয়ে কথা বলা নিষেধ, জেনারেল গ্রাটিয়ার লোকজন জানলে ধরে নিয়ে যাবে।’ ফিসিফিসিয়ে বলল রোবটটি।
নিউকের এই বিদ্রোহীদের নিয়ে আর মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করছে না। তবে সেই তরুণীর কোমল চেহারাটা তার মন থেকে মুছে ফেলতেও পারছে না কিছুতেই! তার মনের ভিতর অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু আপাতত পেটে টান পড়েছে, দুদিন ধরে পেটে দানাপানি কিছু পরেনি। নিউকের আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না। সামনের দিকে পা বাড়াল সে। একটু এগুতেই হাতের ডানে একটি রেস্টুরেন্ট পেয়ে যায়। সেখানে ঢুকেই দেখে একজন লাল পোশাক পরা ওয়েটার। ওয়েটার তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলে, ‘আসুন স্যার।’
রেস্টুরেন্টটির চারপাশে আরও মানুষজন বসে কেউ খাচ্ছে, কেউবা বন্ধুদের সাথে খোশ গল্প করছে। ‘এখানে বসুন স্যার’ একটি খালি আসন দেখিয়ে বলে ওয়েটার মেয়েটি।
‘আপনার পছন্দের খাবার নিয়ে আসছি।’ বলেই যাবার জন্য উদ্যত হয় মেয়েটি।
নিউক ওয়েটারের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে, ‘আমার পছন্দের খাবার মানে? আমি তো কোনো অর্ডার দেইনি?’
মেয়েটি ভ্রম্ন কুঁচকে বলে, ‘স্যার আপনি যখন দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেন ঠিক তখনই অটোমেটিকভাবে আমাদের উন্নত প্রযুক্তির স্কানার আপনার ত্রি—ডি মডেল পেয়ে গেছে। আপনার বায়োলজিক্যাল বডি এবং মস্তিষ্কের সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে আপনার প্রিয় খাবার প্রস্তুত করার অর্ডার চলে গেছে আমাদের কিচেনে।’
নিউক নিজের প্যান্টের পকেটে হাতড়ে দেখে কোনো ইউনিট নেই। তাছাড়া এই জগতে তার কোনো ইউনিট থাকার কথাও নয়। তবে আপাতত সেটা চেপে যায়। আগে পেটে খানা—খাদ্য চালান করা যাক। পরে দেখা যাবে কী হয়। ক্ষুধায় পেট চেঁা—চেঁা করছে।
Reviews (0)
Get specific details about this product from customers who own it.
This product has no reviews yet. Be the first one to write a review.
Gadgetz
Books & Magazine
Electronics
Home & Appliance
Man's Collection
Mackup & Jewellery
China Bag collection
Combo Offer
Women's Collection
Winter Collection
Jalchhabi Exclusive